কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ এবং মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার হিসেবে উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার; এ দুটি উপকরণ দিয়েই আপনি সরাসরি দেখতে পারবেন টিভি চ্যানেল কিংবা শুনতে পারবেন রেডিও। শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানের কিংবা পারিবারিক যে কোনো ভিডিওকেই সরাসরি ইন্টারনেটে দেখাতে পারবেন। এর মাধ্যমে যে কোনো অডিও ও ভিডিও উৎসকেই ইন্টারনেটে সরাসরি সমপ্রচার করা সম্ভব। এতো কিছু সুবিধা সম্বলিত একটি ভিডিও সার্ভার প্রকল্প তৈরি করেছেন সালাউদ্দিন সেলিম। প্রকল্পটির নাম ‘ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভার’।
লাইভ ভিডিও
টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য এটি খুবই দরকারি প্রযুক্তি। ইন্টারনেট কিংবা ফাইবার অপটিক সংযোগ আছে এমন যে কোনো স’ানেই ছোট্ট এই ডিভাইসের মাধ্যমেই সরাসরি ভিডিও পাঠানো যাবে। এতে প্রয়োজন মাত্র ১ থেকে ৩ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট কিংবা ইন্ট্রানেট।
এটি তৈরিতে দুটি ভিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। একটি ট্রান্সমিট ইউনিট এবং অন্যটি রিসিভার ইউনিট। ট্রান্সমিট ইউনিট এবং রিসিভার ইউনিট লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। ট্রান্সমিটার ইউনিটে একটি পিসিআই কার্ড রয়েছে ভিডিও উৎস সংযোগের জন্য। এতে ভিডিও ক্যামেরা সংযোগ করে দিলে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কনটেন্ট সরাসরি চলে আসবে রিসিভার প্রানে-। রিসিভার থেকে কম্পোজিট কিংবা এসডিআই উভয় ফর্মেটের ভিডিও সিগন্যালই বের করা যাবে এবং এ সিগন্যাল সরাসরি ভিডিও সুইচার কিংবা রাউটারে যুক্ত করে পাঠানো যাবে। এটি ‘এমপিজি-২’ সমমানের ভিডিও আউটপুট দেয় যা পরিপূর্ণ ব্রডকাস্ট কোয়ালিটি। এতে ভিডিও ক্যামেরা, ভিটিআর, স্যাটেলাইট টিভি রিসিভার, ডিভিডি প্লেয়ারসহ যে কোনো ভিডিও উৎসই ব্যবহার করা যাবে।
ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভার
ওয়েবসাইটে সরাসরি টিভিএ সার্ভারটি স্যাটেলাইট টিভি রিসিভার কিংবা যে কোনো ভিডিও উৎস থেকে নেয়া ভিডিওকে তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েবসাইট উপযোগী করে সরাসরি ওয়েব সার্ভারে পাঠিয়ে দেবে এবং নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে ওই চ্যানেল দেখা যাবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে কেউ চাইলে স্যাটেলাইট টিভি নির্ভর না কেবল ওয়েব টিভি হিসেবেও চালাতে পারে। এর মাধ্যমে সাধারণ স্যাটেলাইট কিংবা টেরিস্টিয়াল চ্যানেলগুলোতে যেভাবে অনুষ্ঠান (সরাসরি ও রেকর্ড) পরিচালনা করা হয় তেমনভাবেই ইন্টারনেটে টিভি স্টেশন (ওয়েব টিভি) চালানো যাবে। বিভিন্ন প্রোগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত সময়ানুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ৩২ কেবিপিএস থেকে ততোধিক গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে দর্শক ওয়েবসাইট থেকেই টিভি দেখতে পারবেন।
আইপি টিভি
ইন্টারনেট আছে এমন যে কোনো কম্পিউটার থেকে উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারের মাধ্যমেই সরাসরি দেখা যাবে টিভি চ্যানেল। টিভি দেখার জন্য দর্শকদের একটি নির্দিষ্ট আইপি ঠিকানা কিংবা একটা ডোমেইন নেম দিয়ে দেয়া হবে। নেটওয়ার্ক ভিডিও প্লে করতে পারে এমন যে কোনো ভিডিও প্লেয়ারে ( উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার, রিয়েল প্লেয়ার, উইন্যাম্প) ওই ঠিকানাটি বসিয়ে দিলেই ওই টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। ইন্টারনেট গতি যতো বেশি ছবিও ততো নিখুঁত দেখা যাবে। শুধু টিভি চ্যানেলই নয়; যে কোনো ভিডিওর উৎস ব্যবহার করেই সরাসরি সমপ্রচার করা যাবে।
আইপি রেডিও
টিভি চ্যানেলের মতো যে কোনো রেডিও চ্যানেলকেও সরাসরি আইপি রেডিওতে পরিণত করা যাবে। আবার সরাসরি ওয়েবসাইটেও রেডিও চালানো যাবে। এ ক্ষেত্রে শ্রোতাদের জন্য দিয়ে দেয়া হবে একটি নির্দিষ্ট আইপি কিংবা ডোমেইন ঠিকানা। মিডিয়া প্লেয়ার, রিয়েল প্লেয়ার কিংবা ওয়েবসাইটে গিয়েই শোনা যাবে ওই রেডিও। অনেক কম গতির ইন্টারনেট দিয়েই (১৬ কিলোবিট/সে.) শোনা যাবে রেডিও।
কিভাবে কাজ করে এটি?
এটি তিনটি ধাপে কাজ করে। এই অংশ তিনটি হলো ট্রান্সমিটার ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট ও রিসিভার ইউনিট। ট্রান্সমিট ইউনিটটি ব্যবহার করা হয়েছে অডিও-ভিডিওকে সংগ্রহ করে তা সার্ভারে পাঠানোর জন্য। এতে একটি পিসিআই কার্ড রয়েছে। এ কার্ডে যে কোনো ধরনের অডিও-ভিডিওর (কম্পোজিট, ফায়ারওয়্যার) উৎস সংযোগ করে দেয়া যাবে। ট্রান্সমিটারেই রয়েছে অডিও ও ভিডিওকে সংকোচন করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি (কম ব্যান্ডউইথে ভিডিও পাঠানো যায় এমন সুবিধা পাওয়ার জন্য একে সংকোচন করা হচ্ছে। সংকোচন করার পর ট্রান্সমিটার তা সার্ভার বরাবর পাঠিয়ে দেয়।
একটি পরিপূর্ণ স্ট্রিমিং সার্ভার
এটি একটি পরিপূর্ণ ভিডিও সার্ভার যা ট্রান্সমিটার ও ব্যবহারকারীর মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সার্ভারটি একই সঙ্গে একই সময়ে একাধিক টিভি চ্যানেল কিংবা ইন্টারনেটে ব্রডকাস্ট করতে পারে।
এক্ষেত্রে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ চাইলে ওয়েবসাইটে কিংবা আইপি টিভি হিসেবে বিনামূল্যে না দেখিয়ে টাকার বিনিময়েও দেখাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সার্ভার থেকেই অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের জন্য আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়া হবে। ওই আইডি ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে ব্যবহাকারীরা বিশ্বের যে কোনো প্রান- থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে চ্যানেল কিংবা ভিডিও দেখতে পারবেন।
যাদের পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কিংবা সার্ভার কোনোটাই নেই কিংবা যারা নিজেরা সার্ভার স’াপন করতে চান না তাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো মাধ্যম/প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি কাজ করতে পারে। আগ্রহী টিভি চ্যানেলের প্রত্যেকের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হবে। ওই পাসওয়ার্ড ও ঠিকানা ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো প্রান- থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারে সংযুক্ত হয়ে তারা চ্যানেল প্রদর্শন করাতে পারবেন। এমনকি তারা দূরে বসেই চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন (প্রয়োজনে চ্যানেল বন্ধ করা ও চালু করা)। একইভাবে কেউ ব্যক্তিগত ভিডিও (পারিবারিক অনুষ্ঠানের দৃশ্য) সরাসরি দূর-দূরানে- থাকা আত্মীয়-স্বজনদেরও দেখাতে পারবেন। একইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দূর-দূরানে-র শাখাগুলোর মধ্যে সরাসরি লাইভ কনফারেন্সিংও করা সম্ভব।
ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে এটিকে। দূর-দূরান্তে থাকা শিক্ষার্থীরা তাদের ঘরে বসেই ক্লাস করতে পারবে, ডিসকাশন করতে পারবেন সরাসরি।
প্রত্যেকটি টিভি স্যাটেলাইটের একটি নিজস্ব সীমানা থাকে। যার বাইরে ই”ছা করলেই চ্যানেল প্রদর্শন করানো সম্ভব নয়। তাই একটি টিভি চ্যানেলকে বিশ্বব্যাপী প্রদর্শন করাতে চাইলে একাধিক স্যাটেলাইটের শরণাপন্ন হতে হয়। কিনা এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত চ্যানেল ডাউনলিঙ্ক করে লোকালি পরিবেশন করা সম্ভব।
আমাদের দেশে এমন কয়েকটি টিভি চ্যানেল আছে যারা আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ড ভিত্তিক টিভি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত। ওইসব চ্যানেলে এ ভিডিও সার্ভারটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকেই দূর দেশে লাইভ ভিডিও, খবর প্রভৃতি প্রদর্শন করানো সম্ভব।
প্রযুক্তির নাম মাল্টিকাস্ট
মাল্টিকাস্টিং হলো এমন একটা পদ্ধতি যা ডাটা পাঠানোর সময় একটি সিঙ্গেল ভিডিওকেই নির্দিষ্ট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে সবার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে ভাগ করে দেয়। এর ফলে ভিডিও পাঠানোর জন্য সার্ভারের কম ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়। মাল্টিকাস্ট সুবিধা থাকাতে একই সঙ্গে একাধিক দর্শক উপভোগ করতে পারবে।
নেপথ্যে
বেশ কিছু দিন আগে ইউনিভার্সিটির থিসিসের বিষয় হিসেবে ‘আইপি টিভি’কে প্রজেক্ট হিসেবে নেন সালাউদ্দিন সেলিম। পরবর্তীতে টিভি চ্যানেলে পেশাগতভাবে নিযুক্ত হয়ে বোধ করেন চ্যানেলের জন্য দরকারি প্রযুক্তিগুলোর অভাব। প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনুধাবন করেন এর ব্যাপ্তি। বিশেষ করে নেটওয়ার্ক ব্রডকাস্ট ও লাইভ ব্রডকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক দুর্বলতা। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, “বিশ্বের প্রত্যেকটি টিভি চ্যানেলের জন্যই নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্রডকাস্টিং একটি অতি দরকারি প্রযুক্তি। তাই খুঁজতে থাকলাম কম খরচে প্রয়োজনীয় এসব প্রযুক্তির মানসম্পন্ন উন্নয়ন করার। ‘ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভার’ ব্যবহার করে এসব সমস্যার অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব।”
সালাউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন Blogger Facebook