বিদেশ থেকে ফিরতে কিংবা বিদেশে যেতে কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা একটি সাধারণ
আইনানুগ প্রক্রিয়া। কিন্তু অপর্যাপ্ত সচেতনতা এবং যোগাযোগ ঘাটতির কারণে
অনেকের কাছেই কাস্টমস এর কর্মকাণ্ডকে জটিল এবং বিরক্তিকর বলে মনে হয়। এরূপ
নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়াতে একবার চোখ বুলিয়ে নিন কয়েকটি সাধারণ পণ্যের
কাস্টমস নিষ্পত্তির প্রতি :
১. মদ/মদ জাতীয় পানীয় : বাংলাদেশী
পাসপোর্টধারী নাগরিকদের জন্য মদ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আনলে কাস্টমস তা আটক
করবে। বিদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিক হলে ১ লিটার পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর
বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত মদ বিধি
মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
২.
সিগারেট : ১ কার্টন (২০০ শলাকা) পর্যন্ত সিগারেট শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে
পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন।
আটককৃত সিগারেট বিধি মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা
নাই।
৩. মোবাইল ফোন : ২ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ৩-৫ টি
পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ৩৫%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি
আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত মোবাইল ফোন
Adjudication প্রক্রিয়ায় BTRC দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং
অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৪. ল্যাপটপ : ১ টি
শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ২ টি পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ২০%)
পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ
(DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত ল্যাপটপ পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায়
CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ
সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৫. স্বর্ণ বার : ১ গ্রাম আনলেও
শুল্ক-করাদি (প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম এর জন্য ৩,০০০ টাকা) পরিশোধ করতে হবে।
এভাবে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে।
আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণ বার পরবর্তীতে Adjudication
প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড
পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি
ফৌজদারি মামলা করবে।
৬. স্বর্ণালংকার : ১০০ গ্রাম পর্যন্ত (এক
প্রকারের অলংকার ১২ টির অধিক হবে না) শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এর
বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রাম এর জন্য প্রায় ১,৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ
করতে হবে। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ
(DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণালংকার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায়
CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ
সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি
ফৌজদারি মামলা করবে।
৭. টেলিভিশন : ২১" পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে
আনতে পারবেন। ২২"-২৯" হলে ১০,০০০ টাকা, ৩০"-৩৬" হলে ১৫,০০০ টাকা, ৩৭"-৪২"
হলে ২০,০০০ টাকা, ৪৩"-৪৬" হলে ৩০,০০০ টাকা, ৪৭"-৫২" হলে ৫০,০০০ টাকা, ৫৩"
এর বেশি হলে ৭০,০০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
৮. নতুন
শাড়ী/অন্যান্য কাপড়/কসমেটিক্স : ব্যাক্তিগত বিবেচনায় কয়েকটি পর্যন্ত
শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। আরও কয়েকটি শুল্ক-করাদি (প্রায় ১৬০%)
পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে বাণিজ্যিক বিবেচনায় কাস্টমস তা
আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত পণ্য পরবর্তীতে Adjudication
প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড
পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৯. ওষুধ : জরুরী বিবেচনায়
প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কিছুটা আনতে পারবেন। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে
কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত ওষুধ পরবর্তীতে
Adjudication প্রক্রিয়ায় DGDA দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং
অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
১০. বৈদেশিক মুদ্রা :
বিদেশে যাওয়ার সময় পাসপোর্টে এনডোরস [বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত
ক্ষেত্র ব্যাতিত] ব্যাতিত কোন বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিতে পারবেন না। তবে
বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫,০০০ টাকা পাসপোর্টে এনডোরস ছাড়াই সাথে নিতে পারবেন।
সাধারণত প্রতি বার ভ্রমনে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত এনডোরস করিয়ে নেওয়া যায়।
এনডোরস ব্যাতিত বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিলে কাস্টমস আটক করবে। আটক রশিদ (DM)
বুঝে নিবেন। আর মুদ্রা পাচার বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা
করবে। বিদেশ থেকে ফেরার সময় ইচ্ছেমত বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারবেন। তবে ৫,০০০
ডলার/সমমান এর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনলে অবশ্যই কাস্টমস এর নিকট FMJ ফরম-এ
ঘোষণা প্রদান করতে হবে।
* সাময়িক আটক : শুল্ক-করাদি পরিশোধ
সাপেক্ষে খালাসযোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক শুল্ক-করাদি পরিশোধ করার মত
টাকা সাথে না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই। সেক্ষেত্রে কাস্টমস তা সাময়িকভাবে আটক
করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। সাময়িকভাবে আটককৃত পণ্য ২১ দিনের মধ্যে
যথাযথ শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
** এ-ফরম
(তফসিল-১ ফরম) ঘোষণা : বিদেশ থেকে আসার আগে কার্গোতে ব্যাক্তিগত মালামাল
বুকিং দিয়ে আসলে বাংলাদেশে নেমেই/৭ দিনের মধ্যে এয়ারপোর্ট কাস্টমস এর নিকট
এয়ারওয়ে বিল এবং পাসপোর্টসহ উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত "এ-ফরম" পূরণ করে
মালামাল এর ঘোষণা প্রদান করবেন। অনুমোদিত "এ-ফরম" এর কপি নিয়ে মালামাল আসার
পর শুল্ক-করাদি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পরিশোধ সাপেক্ষে এয়ারফ্রেইট ইউনিট
থেকে মালামাল নিতে পারেন।
*** অপরিচিত ব্যাক্তি এবং ব্যাগেজ-কে বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই না জেনে অন্য কারো দেওয়া মালামাল বহন করবেন না।
**** গোপন সংবাদদাতার পুরস্কার : স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা/মাদক
দ্রব্য/আগ্নেয়াস্ত্র/পুরাকীর্তি/বন্য প্রাণি/রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি
হুমকি হিসেবে বিবেচিত বস্তু ইত্যাদি সহ আমদানি-রপ্তানী নিষিদ্ধ যে কোন
পণ্যের চোরাচালান সম্পর্কে এয়ারপোর্ট কাস্টমস-কে তথ্য দিন, সেই সাথে গোপন
সংবাদদাতা হিসেবে জিতুন আকর্ষনীয় আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। আপনার পরিচয়
সংক্রান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা কাস্টমস এর ঐতিহ্য।
এছাড়াও কাস্টমস
আনুষ্ঠানিকতা, শুল্ক-করাদি, যাত্রী সেবা এবং চোরাচালান সংক্রান্ত যে কোন
তথ্য বিনিময়ের জন্য আমাদের ইনবক্স-এ লিখুন কিংবা কথা বলুন +৮৮-০১৮৭৫৬৭৩৬৬৬
বা +৮৮-০২৮৯০১৭৫৮ নম্বরে।
"এয়ারপোর্ট কাস্টমস আপনার সেবায় নিবেদিত"
ধন্যবাদ।
-----------
এই পোস্ট কপি করা হয়েছে এই পেজ থেকে https://www.facebook.com/customs.hsia?fref=nf