ব্লগিং
শুরু করবার আগেই নতুনেরা এমন একটা কথা শুনেন যে ব্লগিং করে নাকি ওমুকে এত
টাকা, তমুকে এত ডলার কামায়। এই শুনে ছেলে-মেয়েরা ঝাপিয়ে পড়ে ব্লগিং এ, এরপর
কিছু কিছু সাইটে শুরু করে লেখালেখি। একসময় তারা জানতে পারে নাহ, এমনে
লিখলেই হবে না, মানুষ পড়তে হবে। তাই তারা হয় ধর্মীয় লেখা না হয়
নাস্তিকতাবাদী লেখা না হয় ১৮+ লেখা শুরু করে, পায় প্রচুর ভিজিটর। কিন্তু
হায়, কেউ টাকা দেয় না।
এরপর তারা জানতে পারে এডসেন্স নামে কিছু
একটা আছে, এবং ঐখান থেকে টাকা কামানো যায়। এবার শুরু হয় না জেনে না বুঝে না
পড়ে শুধুমাত্র শুনে কোপাকুপি! কিন্তু হায়, একি! এডসেন্সে আর একাউন্ট
এপ্রুভ হয় না।
তাই, আজকে লিখতে বসলাম এডসেন্সে এপ্লাই করবার আগে আপনাকে করতে হবে এমন কিছু জিনিষের কথা। তো, চলেন শুরু করা যাক।
পয়েন্ট গুলি পড়তে হলে আপনাকে নিচের থেকে “পৃষ্ঠা সমূহের” পরের নম্বর গুলিতে ক্লিক করে করে পড়তে হবে।
০. এডসেন্স কি?
এডসেন্স হচ্ছে গুগলের
একটি বিজ্ঞাপনী অংশ, যার মাধ্যমে তারা পে-পার-ক্লিক অনুযায়ী বিভিন্ন ওয়েব
সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এটিকে বর্তমানে পৃথিবীর সব থেকে বড় এডস
নেটওয়ার্ক বলা হয়। এর কোড নিজের সাইটে বসিয়ে কোন ব্লগার বা ওয়েব মাষ্টার
তার ওয়েব সাইটে আসা ভিজিটরদেরকে বিভিন্ন কম্পানির বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয়
করা যায়।
এই কোড পেতে হলে আগে ব্লগার বা ওয়েব
মাষ্টারকে তার নিজের ওয়েব সাইট এডসেন্সের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। সঠিক
ভাবে প্রস্তুত করবার পরে গুগলের
এডসেন্সের ওয়েব সাইটে গিয়ে তারপর এপ্লাই করতে হবে। একবার এপ্লাই এপ্রুভ হলে তারপর কোড পাওয়া যাবে।
১. প্রাইভেসি পলিসি
অনেকেই মনে করেন যে ব্লগের ক্ষেত্রে
প্রাইভেসি পলিসি একটা হাস্যকর বিষয় এবং এর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু গুগলের
হিসাবে এটার দরকার অনেক। তাই আপনি যখন আপনার ব্লগকে সাজাবেন, তখন অবশ্যই
আগে প্রাইভেসি পলিসি গুলি লিখে তারপর পাবলিশ করবেন।
প্রাইভেসি পলিসি হল এমন একটা পেইজ যেখানে
বর্ণনা থাকবে, লেখকদের কি কি অনুমতি আছে, একজন ব্যবহারকারী এই ব্লগে কি কি
করতে পারবে, তাদের ইমেইল, ফোন, এবং বাড়ির এড্রেস কোন ভাবে আপনার কাছে
সংরক্ষিত থাকবে এবং কিভাবে তা ব্যবহার করা হবে এবং কিভাবে তা সবার হাতে
যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে এমন কিছু কথা।
আমার ধারণা এই কথাগুলি লিখে দিতে কারও কোন
অনাগ্রহ থাকবে না। আর কিভাবে লিখবেন? খুবই সহজ, এটা আপনি নিজেও লিখতে
পারেন আর তা না পারলে গুগলে ঢুকে সার্চ দিন “Privacy Policy Generators
online” লিখে, দেখবেন অনেক ফ্রি প্রাইভেসি পলিসি জেনারেটর পাবেন।
২. About পেইজ
সাধারণত ব্লগের ক্ষেত্রে about পেইজের খুব
একটা গুরুত্ব না থাকলেও যখন আপনি এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করছেন, তখন এটা
জরুরী বিষয়। About পেইজ না থাকলে আপনার এডসেন্সের এপ্লিকেশন এপ্রুভ হওয়ার
সম্ভাবনা কমে যায়। এখানে আপনাকে এমন কিছুই করতে হবে না, শুধু আপনার ব্লগকে
একটু বর্ণনা করাতে হবে। এখানে আপনারা কি করেন, কি লিখেন, কেন লিখেন ইত্যাদি
ইত্যাদি। এটা আপনার ভিজিটর বা ব্লগারকে একটা ধারণা দেয় যে আপনি আসলি কি
করছেন, আর কেন করছেন।
৩. কন্টাক্ট পেইজ
এটা অবশ্যই অবশ্যই রাখার মত একটি পেইজ।
আপনার সাথে কেউ যদি যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে কি করে যোগাযোগ করবে, তার একটা
উপায় আপনাকে রাখতেই হবে। যদি কন্টাক্ট পেইজে একটা ফর্ম রাখতে পারেন,
যেখানে লিখে দিলেই তা ব্লগ এডমিনের কাছে মেইলের মাধ্যমে চলে যাবে, তাহলে
আরও ভাল হয়।
এটা গুগলকে দেখানো যে আপনি আসলেই আপনার ব্লগের রিডারদের বিষয়ে বিশেষ কেয়ারফুল, আপনি জানতে চান আপনার ব্লগ সম্পর্কে পাঠকেরা কি ভাবছে।
৪. নাম আর ইমেইল ভেরিফিকেশন
আপনাকে আপনার এবাউট বা কন্টাক্ট পেইজে
আপনার নাম এবং ইমেইল এড্রেসটি সঠিক ভাবে এবং দেখা যায় এমন ভাবে লিখতে হবে।
মাথায় রাখতে হবে, আপনার নাম এবং ইমেইল এড্রেস সেটাই লিখবেন, যেটা গুগলে
এপ্লাই করবার সময় আপনি ব্যবহার করবেন। কোন ভাবেই অন্য নাম বা ইমেইল এড্রেস
লিখে রাখলে তা এপ্রুভড হবে না।
আবার মাথায় রাখবেন, আপনার নামটি অবশ্যই
যেন আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্টের নামের বানানের সাথে পুরোপুরি
মিল থাকে। অন্য কোন রকম নাম দিলে পরে ভেরিফাই করতে বললে আপনি আর তা পারবেন
না।
এটা দিয়ে গুগল জানতে চায় যে আসলেই সত্যিকারের একজন বেক্তি এই সাইটের জন্য এপ্লাই করেছে, এবং সে এই সাইটের একজন এডমিন।
৫. বয়স ভেরিফিকেশন!
সত্যি কথা আমি যখন লেখাটা শুরু করেছি তখন
এই জিনিষটা আমার মাথাতেই ছিল না, কিন্তু কিছু ব্লগ ঘুরতে ঘুরতে একটা ছেলের
লেখা পড়লাম, সে ১৭ বছর বয়স হবার কারণে তার ব্লগটি এপ্রুভড হচ্ছে না। পরে
খুঁজে পেলাম আসলেই গুগল এডসেন্স ১৮ বা তার বেশী বয়সীদের জন্য। তাই এই বিষয়ে
সতর্ক থাকতেই হবে।
৬. সর্বনিন্ম কতটি পোষ্ট থাকতেই হবে?
এই প্রশ্নটি অনেকেই আমাকে করেন। কিন্তু এই
বিষয়ে গুগলের কোন নির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই বললেই এমনও দেখা যায় যে ৪০০ লেখা
আছে, কিন্তু গুগল এপ্রুভ করছে না, আবার মাত্র ৩০-৪০টা পোষ্টর সাইটকে
এপ্রুভ করে বসে আছে। তবে সাধারণত এক্সপার্টরা বলেন যে আপনার সাইটে কমপক্ষে
৭০-১০০ টি পোষ্ট থাকতেই হবে। আর প্রতি পোষ্টের সাইজ অবশ্যই অবশ্যই ৫০০+
ওয়ার্ডের হতে হবে।
৭. ওয়েব সাইটের বয়স কতদিন হতে হবে?
এই বিষয়ে গুগলের সরসরি কথা হল কমপক্ষে
৬মাস বয়স হতে হবে, কিন্তু প্যাচ লাগইছে অন্য খানে। তা হল তারা বলে দিছে যে
চিন এবং ইন্ডিয়ার কিছু সাইটের জন্য এই রুল। অন্যদের জন্য কি? তার কোন কিছু
বলা নাই। তাই আমার সাজেশন, সাইটের বয়স কমপক্ষে ৬মাস হবার আগে এপ্লাই করেন
না।
আবার ছয় মাস মানে ডোমেইন কেনা থাকে ৬মাস
তা বলি নাই। কন্টেন্ট এড করা শুরু থেকে ছয় মাস ধরবেন। আর হ্যাঁ আপনি হয়ত
বলবেন যে ওয়ার্ডপ্রেসে তো ব্যাক ডেইটে পোষ্ট দেওয়া যায়, সেইটা করব। খবরদার,
গুগলের সাথে কোন ভাওতাবাজী কইরেন না। এপ্লিকেশন এপ্রুভ না হইলে আপনার
সমস্যা, গুগলের না। মাথায় রাখতে হবে বিষয়টি।
৮. ডিজাইন
কন্টেন্টের পরে আসে ডিজাইনের প্রশ্ন।
এক্ষেত্রে একটা কথাই বলতে চাই, যথা সম্ভব সুন্দর এবং গোছাল করুন। সাইট যথা
সম্ভব হালকা করুন। আর এখনের সময়, সাইট রেসপন্সিভ করার চেষ্টা করুন। এতে করে
আপনার প্রোফেশনালিজম প্রকাশ পাবে, আপনি যে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ, তা প্রকাশ
পাবে।
তই বলে আবার ভাববেন না যে সিরাম কিছু করা
লাগবে। অনেক ফালতু ডিজাইনের ব্লগও মাসে হাজার ডলার কামায়, তার মনে তাদেরটা
এপ্রুভ হয়েছে। কিন্তু ডিজাইনের কথা বলার একটাই কারণ, সেটা হল সব দিক আপনাকে
প্রস্তুত রাখা!
৯. কন্টেন্টের ধরণ
যদি জিজ্ঞাসা করেন যে ঠিক কোন ধরণের কাজের
জন্য এডসেন্সের এপ্লিকেশন এপ্রুভ হবার কোন চান্সই থাকে না, তাহলে বলব
কন্টেন্টের ধরণের গন্ডোগলের কারণে। গুগল প্রথমেই যেই জিনিষটি বিচার করবে তা
হল এই সাইটের কন্টেন্ট কি ধরণের। আপনি যদি এডাল্ট, অবৈধ্য কোন কিছু,
ড্রাগ এবং অন্য যে কোন আন ইথিকাল বিষয়ের উপরে ব্লগ তৈরী করেন, তাহলে আর
কষ্ট করে এপ্লাই করবার দরকার নাই। তারা সোজা আপনার এপ্লিকেশন ডিনাই করে
দিবে।
তবে অনেকেই বলেন যে এই ধরণের অনেক অনেক
সাইটেই গুগল এডসেন্স দেখেছেন তারা। সেটা কিভাবে সম্ভব? আমি বলব সম্ভব, তবে
এপ্লাই করে নয়। অন্য ভাবে। সেটা জানতে হলে আপনাকে আমাদের টেকব্লগে আগামী
ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৪ তে নজর রাখতে হবে। কারণ তখন ইন শা আল্লাহ আমি ঐ বিষয়ে
লিখব।
১০. কন্টেন্টের ভাষা
এইটা বড় একটা বিষয়। আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই
অবশ্যই এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে যে গুগল এডসেন্স মাত্র কয়েকটা ভাষার ওয়েব
সাইটে এড দেখায়, আর তার মধ্যে আমাদের দুঃখ যে বাংলা ভাষা নেই। অর্থাৎ
বাংলা ভাষার কোন সাইটে এডসেন্স পাওয়া যাবে না।
এডসেন্স যেই যেই ভাষা এলাউ করে তা
হল: Arabic, German, Portuguese, Bulgarian, Greek, Romanian, Chinese
(simplified এবং traditional), Hebrew, Russian, Hungarian, Serbian,
Croatian, Indonesian, Slovak, Czech, Italian, Slovenian, Danish,
Japanese, Spanish, Dutch, Korean, Swedish, English, Latvian, Thai, Estonian, Lithuanian, Turkish, Finnish, Polish, Ukrainian, French, Norwegian এবং Vietnamese।
তবে এখানেও অনেকেই বলেন যে বেশ কিছু বাংলা
সাইটে আপনারা গুগল এডসেন্স দেখেছেন তারা। এটিও আমি টেকব্লগের আগামী
ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৪ তারিখের পোষ্টেই লিখব ইন শা আল্লাহ।
১১. টপ লেভেল ডোমেইন
যদিও গুগল আগে ফ্রী ওয়েব সাইট যেমন
ব্লগস্পট, ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস সহ অনেক কিছুতেই এপ্রুভ করত সহজেই, কিন্তু
বর্তমানে ডোমেইন কেনা সহজ লভ্য হবার কারণে এখন গুগল আর সহজে টপ লেভেল
ডোমেইন না থাকলে এপ্রুভ করতে চায় না। টপ লেভেল ডোমেইন বলতে আপনার নামে বা
আপনার ব্লগের নামে .com/.net/.info/.me এই ধরণের ডোমেইনের কথা বলা হচ্ছে।
যেমন: http://thereviewmonster.com/
এটির সাথে আপনি চাইলে আপনার হোস্টিং ও
ব্যবহার করতে পারেন, আবার ওয়ার্ডপ্রেসে.কম এর মত সার্ভিসও ব্যবহার করতে
পারেন, কিন্তু ডোমেইন লাগবে নিজের।
আপনি যদি ডোমেইন-হোস্টিং কেনার জন্য ভাল কোন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চান তাহলে
এখানে ক্লিক করে বাংলাদেশী একটি সার্ভিসের ওয়েব সাইট দেখতে পারেন, যারা ওয়েব ডিজাইনও করে থাকে, এবং এডসেন্সের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
১২. অন্য এড নেটওয়ার্ক
এই বিষয়টি একটু স্পর্শ্বকাতর। গুগল কখনই
চায় না যে আপনি তাদের ছাড়া অন্য কোন এড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। তাই গুগলে
এপ্লাই করার আগেই অন্য সব নেটওয়ার্কের কোড বন্ধ করুন, এবং আপনার এপ্লিকেশন
সম্পূর্ণ পরিমানে এপ্রুভ হবার আগ পর্যন্ত তা চালু না করাই ভাল।
যদিও আপনি হয়ত বলবেন যে গুগলতো সাইট চেস
থেকেই বুঝতে পারবে যে আপনি অন্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেন, কিন্তু বিষয় হল
এটা তাদের একটা ধারণা দিবে যে আপনি এখন তাদেরটাই ব্যবহার করতে চান।
১৩. পেইড ট্রাফিক
গুগল যেই কয়টা জিনিষ অপছন্দ করে, তার
মধ্যে একটা হল পেইড ট্রাফিক! আপনি যখন এপ্লই করবেন, তখন গুগল এটি দেখবে,
তাই আগে থেকে পেইড ট্রাফিক ব্যবহার করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
শেষ কথা
আপনি যেটা ভালবাসেন, সেটা নিয়ে লেখা শুরু
করুন, দরকার হলে আপনার সমমনা আরও কাউকে সাথে নিয়ে শুরু করুন, রেগুলার
লিখুন। এমন না যে আজকে লিখলেন আবার ১০ দিন পর, আবার ২দিন পর। বরং কিছুদিন
পরপরই কিন্তু একই রকম বিরতিতে লিখুন। এমনভাবে লিখবেন না যাতে মনে হয় যে
আপনি আসলেই টাকার জন্যই লিখছেন। বরং প্রোফেশনাল ভাবে লিখুন। কিভাবে লিখবেন
তা জানবার জন্য একই রকম লেখা লিখছে এমন সাইট বা ব্লগ দেখুন, পড়ুন। এতে
আপনারই ভাল হবে।
আর লেখাটা যদি ভাল লেগে থাকে, তাহলে
আপনাকে অনুরোধ করব লেখাটি সবার সাথে শেয়ার করতে, আর অন্তত নিচের থেকে
ফেসবুক, টুইটার, গুগল+ এ লাইক দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আশাকরি দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টে।